সমাধান - বনফুল

অইসা আকাশ নীল, বাতাস স্নিগ্ধ, ফুল সুন্দর এবং আমার নাম নীহাররঞ্জন হওয়া সত্ত্বেও আমার বিবাহ হইল পাকুড়াগ্রাম-বাসিনী ক্ষান্তমণি নাম্নী এক পল্লীবালার সহিত এবং বৎসরান্তে তিনি একটি কন্যারত্ন প্রসব করিয়া তাহার নাম রাখিয়া দিলেন—বুঁচি ! নামকরণটীতে একটু আপত্তি করিয়াছিলাম। তাহাতে বাড়ীর এবং পাড়ার সকলে সত্য কথাই বলিল—এই কালে কুচ্ছিৎ মেয়ে— তার নাম পুষ্পমঞ্জুরি দিবি নাকি? তোর যত সব অনাছিষ্টি —

মেয়েটা কুৎসিতই ছিল । রঙ ত কালোই—একটা চোখ ছোট আর একটা বড়তাছাড়া কি রকম যেন বোকাহাবা ধরনের—মুখে সর্বদাই লাল ঝরে । পুষ্পমঞ্জুরি নাম দেওয়া চলে না তা ঠিক।

বছর দুই পরে।

ক্ষান্তমণি বুঁচিকে লইয়া বাপের বাড়ী গিয়াছেন। সেদিন রবিবার কাহারো কাজকর্ম নাই—চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া নানা আলোচনা চলিতেছে । হঠাৎ আমার কথাই উঠিয়া পড়িল ।

নৃপেন বলিল—এই দেখ না নীহারের অদেষ্ট। হল বা যদি একটা মেয়ে-তাও আবার এমন কদাকার—

শ্যাম বোস বলিলেন—তা আবার বলতে । বিয়ে দেবার সময় নাকের জলে চোখের জলে হতে হবে আর কি! টাকা চাই প্রচুর।

হারু খুড়ো তামাকটাতে দুটান দিয়া কহিলেন—আরে ভাই, আজকাল আবার শুধু টাকা হলেই হয় না। লোকে টাকাও চায়-রূপও চায় যে। চোখ দুটাে ছোট বড় হয়েই আরও মুস্কিল কিনা— কি যে হবে—

সকলেরই ঘোরতর দুশ্চিন্তা।

এমন সময় পিওন আসিয়া আমাকে একখানা চিঠি দিয়া গেল।

নৃপেন বলিল—কার চিঠি হে ?

আমি চিঠিটা পড়া শেষ করিয়া বলিলাম—বউ লিখেছে। বুঁচি মারা গেছে কাল।

0 comments:

Post a Comment

[বি:দ্র: এই সাইটের বেশির ভাগ লেখা ছোটদের জন্য, তাই দয়া করে এমন মন্তব্য করবেন না যাতে করে আমাদের ক্ষুদে পাঠকদের মানসিকতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ধর্ম নিয়ে কিংবা এমন কোন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ রইল। যদি গল্পটি ভালোলোগে তবে নিশ্চয় মন্তব্য করুন, আপনার সুগভীর মন্তব্য অন্যকে গল্পটি পড়তে অনুপ্রাণিত করবে। ] ধন্যবাদ